Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ফসল উৎপাদন ও শস্যনিবিড়তা

ফসল উৎপাদন ও শস্যনিবিড়তা
কৃষিবিদ সিকদার আনোয়ার
বাংলাদেশের কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের জনগণ তাদের আয়ের বেশির ভাগ খাদ্যের জন্য ব্যয় করে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫ (ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব সব নাগরিকের খাদ্যের মৌলিক চাহিদা নিরবচ্ছিন্নভাবে সরবরাহ নিশ্চিত করা। জাতিসংঘের ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি-২) অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে সব নাগরিকের জন্য খাদ্য জোগানে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বাংলাদেশের মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় ৮৬ লাখ ৪৪ হাজার ৪৯০ হেক্টর। মোট ফসলি জমি প্রায় ১৭৬ লাখ ৯৪ হাজার ৬৪১ হেক্টর যা জনসংখ্যার তুলনায় কম। আর তাই কৃষিতে শস্যনিবিড়তা (Cropping Intensity) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটি নির্দিষ্ট জমিতে এক বছরে কয়টি ফসল উৎপাদন করা হয় শস্যনিবিড়তা তাই নির্দেশ করে। সাধারণত প্রাকৃতিক পরিবেশ, মৃত্তিকার গুণাগুণ, সেচ সুবিধাসহ কৃষি উপকরণের পর্যাপ্ততা,  মালিকের অনুপস্থিতি, অতিরিক্ত জমির মালিকানা, বর্গা চাষ, অকৃষি খাতে উপার্জন বৃদ্ধি, বৈদেশিক কর্মসংস্থান, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিসহ নানাবিধ কারণের ওপর জমির শস্যনিবিড়তা হ্রাসবৃদ্ধি নির্ভর করে। মৃত্তিকা পরীক্ষা করে শস্য নিবিড়তা বৃদ্ধি করে ফসল উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। দেশব্যাপী কৃষি অঞ্চলগুলোতে এক ফসলি, দুই ফসলি, তিন ফসলি শস্যবিন্যাস চলমান রয়েছে। চার ফসলি শস্যবিন্যাস মোট ফসলি জমির মধ্যে প্রায় ৬১ হাজার ৮২২ হেক্টর চাষাবাদ হচ্ছে। স্বাধীনতার পরবর্তী   ১৯৭১-৭২ সালে ফসলের নিবিড়তা ছিল ১৫৩.৭৪%। বর্তমানে বেড়ে হয়েছে ২০৫% (ডিএই ২০২০-২১)। কৃষি অঞ্চল হিসেবে ফসল নিবিড়তা সবচেয়ে বেশি বগুড়া অঞ্চল ও যশোরে  অঞ্চলে (২৩৬), সবচেয়ে কম স্বাভাবিকভাবেই রাঙ্গামাটি কৃষি অঞ্চলে (১৩৮)। এছাড়াও দেশের দক্ষিণাঞ্চল যেখানে নদ-নদী খাল-বিলের সংখ্যা বেশি সেসব (যেমন পটুয়াখালী (১৯৬), পিরোজপুর (১৬৫), খুলনা (১৭৬), ঝালকাঠি (১৮৩), সাতক্ষীরা (১৯৮), নোয়াখালী (১৭৩), বাগেরহাট (১৫৪), শরীয়তপুর (১৮৬) এবং বরিশাল (২০২)) জেলায় শস্যনিবিড়তা অপেক্ষাকৃত জাতীয় গড়ের চেয়ে কম। এক সময়কার প্রবাদ বাক্য “ধান নদী খাল, এই তিনে বরিশাল”। সেই বৃহত্তর বরিশালে অনেক আবাদযোগ্য জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হচ্ছে না। অথচ ২০১৯ সালের কৃষি শুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বরিশাল বিভাগে কৃষি খানার সংখ্যা সর্বাধিক ৬৬%। এখন বরিশাল নয় বরং উত্তরাঞ্চল বা পশ্চিমাঞ্চলকে বাংলাদেশের শস্যভা-ার বলা হয় যেখানে চাষাবাদ হয় মূলত ভূগর্ভস্থ পানির সেচ দিয়ে।
অনুরূপভাবে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলের জেলাগুলোতে বহু আগে থেকেই অনুপস্থিত ভূমি মালিকানার জন্য (Absentee land owner) কৃষি জমিতে সঠিক মাত্রায় চাষাবাদ হচ্ছে না। অনেক আবাদযোগ্য জমি পতিত অথবা সাময়িকভাবে পতিত পড়ে থাকে। পরিস্থিতি বিবেচনায়  কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে (Increasing Cropping in Sylhet Region Project) শস্যনিবিড়তা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়। সুনামগঞ্জ, সিলেট এবং  মৌলভীবাজারে ২০১৩-১৪ সালে শস্যনিবিড়তা ছিল যথাক্রমে ১৩০, ১৫১, এবং ১৫০। চার-পাঁচ বছরের ব্যবধানে ২০১৯-২০ সালে সুনামগঞ্জ, সিলেট ও মৌলভীবাজারে  শস্যনিবিড়তা কিছুটা বেড়ে যথাক্রমে ১৩৭, ১৭৬ এবং ১৮০ তে দাঁড়িয়েছে। এসব জেলাগুলোতে শস্যনিবিড়তা আরো বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে শিল্পের মতো উপকরণ, প্রযুক্তি বা বিনিয়োগ বৃদ্ধি করলেই ক্রমাগত উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পেতে থাকে না, একটা পর্যায়ে গিয়ে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির হার কমতে থাকে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে জমির প্রাপ্যতা বৃদ্ধির সুযোগ খুব একটা নেই বরং শিল্পায়ন, নগরায়ন, রাস্তাঘাট নির্মাণ এবং অকৃষি খাতে ভূমি ব্যবহারের কারণে প্রতি বছর প্রায় এক শতাংশ হারে কৃষি জমির পরিমাণ কমছে। এটি কৃষির উপর একটি বড় চ্যালেঞ্জ যা মোকাবিলা করতে হলে জমির পূর্ণ ব্যবহার করা প্রয়োজন।
চলমান কোভিড-১৯সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কৃষির অগ্রযাত্রায় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার দুটো বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন; ১) এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না এবং ২) ফসলের বহুমুখীকরণ। সময় এসেছে সুচিন্তিতভাবে দেশের বিভিন্ন কৃষি পরিবেশ অঞ্চলকে বিভিন্ন ফসলের আওতায় ভাগ করে চাষাবাদের আওতায় এনে  কাক্সিক্ষত মাত্রায় খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করার। যেহেতু ধান বাংলাদেশের প্রধান ফসল একে বাদ দিয়ে শুধু অন্য ফসলের উন্নয়ন কখনই সময়োপযোগী হবে না। বর্তমান সরকারের লক্ষ্য বাংলাদেশে মেধাসম্পন্ন জাতি গঠনে নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করা। তাই  বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কৃষি বিজ্ঞানীরা ২০৩০ সালের মধ্যে ১৯ কোটি জনসংখ্যার খাদ্য জোগানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে অঞ্চলভিত্তিক শস্যবিন্যাস উদ্ভাবন করে যাচ্ছে। অধিকাংশ চার ফসলি শস্যবিন্যাসগুলোতে দুইটি ধান থাকায় খাদ্য নিরাপত্তার ওপরও কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলবে না।
বাংলাদেশের  কৃষির মৌসুম ৩টি। যথা: ১) রবি মৌসুম; ২) খরিফ-১ মৌসুম; ৩) খরিফ-২ মৌসুম। দেশব্যাপী ১৪ টি কৃষি অঞ্চল রয়েছে। সাধারণত অঞ্চলের কৃষি পরিবেশ যেমন:প্রাকৃতিকরূপ, ভূমিরূপ, সেচ  ও দুর্যোগ পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত অঞ্চলভিত্তিক চার ফসলি প্রায় ৭৪টি শস্যবিন্যাস উদ্ভাবন করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি কম ব্যবহার হয় সেক্ষেত্রে তিন মৌসুমে চার ফসলের শস্যবিন্যাস মসুর-মুগ-রোপা আউশ- রোপা আমন হতে পারে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি), বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) কর্তৃক উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল, স্বল্পমেয়াদি এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ জাত ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া এ ধরনের শস্যবিন্যাসে মুগডালের পড বা ফল তুলে গাছগুলো মাটির সাতে মিশিয়ে দিলে জৈব পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং আমন ধানে কম ইউরিয়া সারের প্রয়োজন হয়। তবে মুগডালের গাছ মাটির সাথে মিশানোর ৪-৫ দিন পর আমন ধানের চারা লাগালে বেশি লাভ হয়। আর মুগডাল চাষে পানির তেমন প্রয়োজন হয় না এবং সঠিক সময় বপন ও রোপণ করা হলে বছরে ৩৬৫ দিনের মধ্যে প্রায় ২৫-২৮ দিন অবশিষ্ট থেকে যায়। এক কথায় বলা যায়  উৎপাদনে সময় ও খরচ কম হয়।
দেশব্যাপী ১৪টি কৃষি অঞ্চলের মধ্যে রাঙ্গামাটি ছাড়া প্রায় সব অঞ্চলে চার ফসলি শস্যবিন্যাসে চাষ চলমান রয়েছে। যেমন : খুলনা অঞ্চলে  সবজি (শীত)-সবজি (শীত)-সবজি (গ্রীষ্ম)-সবজি (গ্রীষ্ম) আবার এভাবেও হতে পারে খেসারি-ফল বাগান (তরমুজ)-আউশ-রোপা আমন। সিলেটে অঞ্চলে সবজি (শীত)-সবজি (শীত)-সবজি (গ্রীষ্ম)-সবজি (গ্রীষ্ম); যশোরে অঞ্চলে  সবজি (শীত)-সবজি (শীত)-সবজি (গ্রীষ্ম)-সবজি (গ্রীষ্ম) অথবা সরিষা-বোরো-আউশ-রোপা আমন; ময়মনসিংহ অঞ্চলে একইভাবে  সবজি (শীত)-সবজি (শীত)-সবজি (গ্রীষ্ম)-সবজি (গ্রীষ্ম) আবার সবজি (শীত)-বোরো-পাট-রোপা আমন হতে পারে। কুমিল্লা অঞ্চলে সবজি (শীত)-সবজি (শীত)-তিল (গ্রীষ্ম)-বোনা আমন আবার সবজি (শীত)-সবজি (শীত)-পাট-রোপা আমন চলমান রয়েছে। রাজশাহী অঞ্চলে তিল-মুগ-রোপা আউশ-রোপা আমন অথবা আলু-মুগ-রোপা আউশ-রোপা আমন অথবা সরিষা-মুগ-রোপা আউশ-রোপা আমন আবার এমনও হতে পারে গম-ধৈঞ্চা-রোপা আউশ-রোপা আমন। জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক সম্পদ বিশেষ করে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমশ নিচে নামার প্রবণতা বিদ্যমান বিধায়  সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারিভাবে কৃষিতে ভূগর্ভস্থ পানি সেচের ব্যবস্থা নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। ভূউপরিস্থ পানি সেচের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদনের প্রচেষ্টা জোরদার করার প্রয়োজন রয়েছে।
মানুষের খাদ্যের প্রাথমিক যোগানদাতা কৃষি।  শিল্প বা অন্য কোন সেক্টর থেকে খাদ্যের জোগান পাওয়া গেলেও ঐসব সেক্টর কৃষির উপর নির্ভর না করে মানুষকে খাদ্য সরবরাহ করতে পারে না। তাই কৃষি জমির সর্বোচ্চ ব্যবহারের বিকল্প নেই। কেউ জমির যথাযথ ব্যবহার করতে না পারলে সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে জমির মালিকানা অপরিবর্তিত রেখে তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। তাতে অনুপস্থিত ভূস্বামীদের জমির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হতে পারে এবং এতে সার্বিকভাবে শস্যনিবিড়তা বৃদ্ধি পাবে।
কৃষি জমির সর্বোত্তম ব্যবহারের পূর্বশর্ত হচ্ছে কৃষিকাজকে লাভজনক এবং আনন্দদায়ক করা। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, চাষাবাদ পদ্ধতি আধুনিকীকরণ, নুতন জাত উদ্ভাবন, বাজারজাতকরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ফসলের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি,-এ সবই আনন্দদানের অনুষঙ্গ। উৎপাদিত শস্যের গুদামজাত বা বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে কৃষকদের মধ্যে সমিতি বা সমবায় সমিতি গড়ে দেয়া যেতে পারে। কর্তিত শস্য এসব সমিতির মাধ্যমে সরকারি সংগ্রহকেন্দ্রে পৌঁছানোর ব্যাবস্থা করা গেলে কৃষক ন্যায্যমূল্য পেতে পারে। জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে         কৃষি মেলা, কৃষক সমাবেশ আরো আকর্ষণীয়  ও প্রতিযোগিতামূলক করা যেতে পারে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ছাড়াও সিআইপির ন্যায় এআইপি প্রবর্তন করার সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। জাতীয়ভাবে ঢাকায় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ইউনিয়ন, উপজেলা বা জেলাপর্যায়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ কৃষকদের/কৃষি বিজ্ঞানীদের অবদানকে স্বীকৃতি প্রদান করা প্রয়োজন।
কৃষিকে টেকসই,আধুনিক এবং নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য নিরাপত্তা বিধান কল্পে সমস্ত আবাদযোগ্য জমি চাষের আওতায় আনতে হবে এবং শস্যনিবিড়তা বৃদ্ধি করতে হবে। তবেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় সোনালি সকালের সূর্যোদয়ে উদ্ভাসিত হবে।

লেখক : সাবেক রেক্টর, বিসিএস প্রশাসন একাডেমি, ৭৪ কলাবাগান ২য় লেইন , ঢাকা, মোবা :  ০১৫৫২৩২৩৩৭১, ই-মেইল :sikder2119@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon